রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৩৬ অপরাহ্ন
সাংবাদিকদের উপর নির্যাতন-নিপীড়ন বন্ধ হবে কবে?
দেশে অহরহ নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন সাংবাদিকরা। বস্তুনিষ্ট সত্য সংবাদ প্রকাশ হলেই সাংবাদিকদের ওপর নেমে আসে লোমহর্ষক নির্যাতন। পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনা যেন বেড়েই চলেছে বাংলাদেশে৷ আর সে কারণে মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালনরত সাংবাদিকরা ভুগছেন চরম নিরাপত্তাহীনতায়৷
প্রশ্ন হলো; সাংবাদিক ও সংবাদকর্মী মারলে বা পেটালে অথবা হত্যা করলে কি হয়.? তারা কি কখনো ন্যায্য বিচার পায়.? তাদের জীবনের কোন নিরাপত্তা আছে.?
তাদের পরিবার-পরিজনের নিরাপত্তা আছে?
রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রের কর্তা ব্যক্তিরা কখনো কি তাদের নিরাপত্তার জন্য কখনো কোন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করেছেন? রাষ্ট্রের সহায়ক হিসেবে তারা কাজ করে যায় অথচ তাদের রাষ্ট্রীয় কোন স্বীকৃতি নেই।
২০১২ সালে নিজ বাসায় সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন সারোয়ার রুনির হত্যার ঘটনার পর ৪৮ ঘন্টার মধ্যে রহস্য উদঘাটনের আশ্বাস দিয়েছিলেন সে সময়কার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন। তবে সাড়ে ৬ বছর পার হয়ে গেলেও সে বিচার এখনো পায়নি সাগর-রুনির পরিবার।
২০১৮,২৮ আগস্ট রাতে পাবনায় আনন্দ টিভির পাবনার প্রতিনিধি সুবর্ণা নদীকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করা হয়। পরে হাসপাতালে তিনি মারা যান। কী অপরাধ ছিল সাংবাদিক সুবর্ণার? সাংবাদিক নির্যাতন আর কত দিন? তাইতো সময় এসেছে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম ঘোষিত ১৪ দফা দাবি বাস্তবায়নে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। আসুন, সকল ধরনের সাংবাদিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে শিখি।
১৪.০৩.২০২০ কুড়িগ্রামে ‘বিবস্ত্র করে’সাংবাদিক নির্যাতন। সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যানকে মধ্যরাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতন এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে বানোয়াট অভিযোগে সাজা দেওয়া ঘটনায় জড়িত জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুলতানা পারভীন আধা বোতল মদ ও দেড়শ গ্রাম গাঁজা পাওয়ার অভিযোগ এনে ওই রাতেই তাকে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়ে জেলে পাঠানো হয়।
২১.১১.১৯ সেপ্টেম্বর মোবাইল ট্টাকিং করে রাজধানীর মিরপুর পল্লবী এলাকার বাসা থেকে সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফাকে আটক করে টেকনাফে নিয়ে যায়। সেখানে থানা হেফাজতে তিনদিন আটকে রেখে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয়। পানির বদলে প্রস্রাব আর না খাইয়ে চোখে মরিচের গুড়া দিয়ে বেয়োনেট দিয়ে খুচিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রক্তাক্ত করা হয়েছিল। হাত পায়ের নখ প্লাস দিয়ে টেনে উঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। চোখ দুটো অন্ধপ্রায় করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। জামিনে বের হলে ক্রসফায়ার দেয়া হবে বলেও পরিবারকে ভয় দেখান ওসি প্রদীপ জানিয়েছেন মোস্তফার স্ত্রী হাসিনা মোস্তফা। দুটি শিশুপুত্র নিয়ে মানবেতর জীবন কাটছে মোস্তফার স্ত্রীর। মাথাগোঁজার ঠাই বসতঘর খানা বিক্রি হয়ে গেছে মামলার পরপরই। ঠিকানাবিহীন হয়ে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে রাত কাটছে এখন।
শুনতে কেমন শোনায়! আমাদেরকে একটা কথা বলারও সুযোগ দেয়নি। এলোপাথাড়ি পেটাতে থাকলো, আমার হাত ভাঙলো, মাথা ফেটে গেল । রক্তারক্তি অবস্থা” এ হচ্ছে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে যাওয়া একজন সাংবাদিকের অভিজ্ঞতা।
শুনতে যেমনই শোনাক, বাংলাদেশে সাংবাদিকদের এরকম নির্যাতনের শিকার হওয়া কোন বিরল ঘটনা নয়, বরং এ প্রবণতা বাড়ছে । তার পরেও নানা কারণে আইনের আশ্রয়ও নিতে চান না অনেক সাংবাদিক। বিগত কয়েক দশকে বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন, হয়রানি ও আক্রমণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এ পেশার অনেকেই।
তাই সময় এসেছে সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় আইন তৈরী করা। সকল সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাবী তোলা উচিৎ-সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য। প্রয়োজনীয় আইনসহ যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অধিকার হিসেবে রাষ্ট্রের নিকট প্রস্তাব উপস্থাপন করা। অন্যথায় যুগে যুগে সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীরা মার খেতে থাকবে ও নির্যাতন এবং নিপীড়নের শিকার হবে।
লেখক: সোহাগ আরেফিন, কেন্দ্রীয় সদস্য, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম।